Skip to main content

হিমোফিলিয়া।

ডাঃ  আশীষ কুমার ঘোষ
শিশু রক্তরোগ বিশেষজ্ঞ
সহকারী অধ্যাপক
শিশু অনকোলজি  বিভাগ
জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইন্সটিটিউট ও হাসপাতাল
ঢাকা।

ভূমিকাঃ

হিমোফিলিয়া ( ইংরেজি: Haemophilia, অথবা hemophilia) হচ্ছে রক্তের একটি বংশানুক্রমিক জিনগত রোগ। রক্ত তঞ্চনে সমস্যা ঘটিত এই রোগে রক্তনালী কেটে গেলে রক্তপাত বন্ধ হতে চায় না অথবা মৃদু আঘাত পেলে শরীরে রক্ত জমাট বেধেঁ  কালো হয়ে যায়।সাধারনত  রক্তে  ফ্যাক্টর - ৮ ও  ফ্যাক্টর -৯  নামক প্রটিনদ্বয়  এর অভাব থাকার জন্য রক্ত তঞ্চনের এই সমস্যা হয় এবং এই প্রোটিনদ্বয় যেহেতু মানব জিনের X ক্রোমোজমে থাকে তাই শুধু পুরুষগন এই রোগে আক্রান্ত হন এবং স্ত্রীগণ এই রোগের বাহক হয়ে থাকেন হিমোফেলিয়া প্রধানত দুই প্রকার যথা -  ফ্যাক্টর VIII এর অভাবে হিমোফিলিয়া এ (A) এবং ফ্যাক্টর IX এর অভাবে হিমোফিলিয়া বি (B)। তবে ফ্যাক্টর ১১ এর অভাবে আরো একপ্রকার রক্তের জমাট বাধার সমস্যা জনিত রোগ আছে যার নাম  হিমোফেলিয়া - সি।

পৃথিবীর অনেক বড় বড় বিখ্যাত ব্যাক্তির এই রোগ রহিয়াছে। বিখ্যাত বিলেতি অভিনেতা রিচার্ড বাটোন, রাশিয়ান রাজপুত্র নিকোলেভিচ,   রাজপুত্র লিওপোল্ড হিমোফেলিয়ার রোগী ছিলেন এবং  রাণী ভিক্টোরিয়া হিমোফিলিয়ার বাহক ছিলেন। এবং এসব কারনেই  হিমফিলিয়াকে অনেকে  রাজকীয় রোগ বলে থাকেন। পৃথিবীর অনেক প্রখ্যাত অলিম্পিয়াড এর এই রোগ ছিল।

প্রতি ১০,০০০ জনসংখ্যার মধ্যে একজন মানুষ এবং প্রতি ৫০০০০ জন পুরুষে একজন পুরুষ  হিমোফিলিয়া রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে যে, প্রতি ৩ জন হিমোফিলিয়া রোগের মধ্যে অন্তত একজন রোগী বংশানুুক্রমে সঞ্চারিত না হয়ে নতুনভাবে আক্রান্ত হয়। হিমোফেলিয়া -এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার হার প্রতি ৫০০০ -১০০০০ জনে একজন, হিমোফেলিয়া -বি রোগের ক্ষেত্রে প্রতি ২০০০০ -৩৪০০০ লোকে একজন। অন্যদিকে হিমোফেলিয়া -সি এর ক্ষেত্রে এই হার দশ লক্ষে একজন। হিমোফিলিয়া ফেডারেশনের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতি লাখে ২০ জন মানুষ হিমোফিলিয়া রোগে আক্রান্ত।

আমরা লক্ষ্য করে থাকি যে, কোনো জায়গা কেটে গেলে বা আঘাত পেলে সাময়িকভাবে ওই স্থান থেকে কিছুক্ষণ রক্তক্ষরণ হতে থাকে এবং নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে এ রক্তক্ষরণ আপনাআপনি বন্ধ হয়ে যায়। হিমোফিলিয়ায় আক্রান্ত রোগীর ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে এ রক্তক্ষরণ আপনাআপনি বন্ধ হয় না। রক্তক্ষরণ হয়ে পড়ে প্রলম্বিত, এমনকি কখনো কখনো কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে এ রক্তক্ষরণ আদৌ বন্ধ হতে চায় না।

প্রলম্বিত রক্তক্ষরণের কারণ।

রক্তক্ষরণ পরিকল্পিতভাবে বন্ধ করার জন্য আমাদের শরীরের মধ্যে রয়েছে এক শক্তিশালী প্রতিরোধ ব্যবস্থা যা স্বয়ংক্রিয়ভাবে রক্ত বন্ধ করতে সাহায্য করে। এ স্বয়ংক্রিয় প্রক্রিয়াকে বলা হয় তঞ্চন প্রক্রিয়া বা coagulation । স্বয়ংক্রিয় প্রক্রিয়া অনেক জটিল রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে ১৩টি ফ্যক্টর সমন্বিতভাবে রক্ত জমাট বাঁধতে সহায়তা করে থাকে। হিমোফিলিয়া রোগের ক্ষেত্রে এই ১৩টি ফ্যক্টরের মধ্যে  মাত্র তিনটি  ফ্যাক্টর ( ফ্যাক্টর -৮,  ফ্যাক্টর -৯ এবং ফ্যাক্টর -১১) অভাব  বা ঘাটতি থাকে। ফ্যাক্টর -এর ঘাটতি বা অনুপস্থিতি  হিমোফিলিয়া রোগীদের রক্তক্ষরণ বিলম্বিত হওয়ার প্রধান কারণ।

বংশানুক্রমিক রোগ  হিমোফিলিয়া

হিমোফিলিয়া সাধারণত পুরুষদের রোগ। মহিলারা এ রোগের বাহক মাত্র তারা সাধারণত এ রোগে ভোগেন না।
পুরুষ এবং মহিলার ক্ষেত্রে জেনেটিক লেভেলে পার্থক্য রয়েছে। একজন পুরুষের শরীরে সেক্স ক্রোমোজম থাকে XY এবং মহিলার শরীরে থাকে XX,   হিমোফিলিয়া রোগ X ক্রোমোজমের মাধ্যমে বংশানুক্রমে সঞ্চারিত  হয়। মহিলাদের ক্ষেত্রে একটি X ক্রোমজোম  হিমোফিলিয়া বহন করলেও অন্য X টি সুস্থ থাকে বিধায় প্রয়োজনীয় ফ্যাক্টর তৈরিতে সক্ষম হন। তাই তারা এ রোগে ভোগেন না। পুরুষদের যেহেতু একটি X ক্রোমোজম থাকে তাই এটি অসুস্থ হলে প্রয়োজনীয় ফ্যাক্টর তৈরি হয় না ফলে তারা হয় আক্রান্ত। পারিবারিক ইতিহাস এক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রোগীর ভাই, মামা, নানা, খালাতো ভাইদের ও এ রোগ থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।

বংশানুুক্রম ছাড়াও হিমোফিলিয়া হতে পারে যেমন হিমোফেলিয়া -সি। এই প্রকার X ক্রোমজম ঘটিত হিমোফেলিয়া নয়। এটাকে বলা হয় autosomal recessive disorder. তাই এই প্রকার হিমোফেলিয়া ছেলে মেয়ে উভয়ের ই হতে পারে। 

অন্যদিকে  আমরা জেনেছি  মেয়েদের হিমোফিলিয়ার রোগ হয় না। তবে কিছু ক্ষেত্রে যেমন—লাইয়োনাইজেশন বা এক্স ক্রোমোজোমে একটি ক্ষতিগ্রস্ত এবং অন্যটি অকার্যকর থাকলে মেয়েরাও হিমোফিলিয়ায় আক্রান্ত হতে পারে। এমনকি বাবা যদি হিমোফিলিয়ার রোগী হয় এবং মা যদি রোগটির বাহক হয়  অথবা মেয়ে সন্তানটি টার্নার সিনড্রোমে আক্রান্ত হয়, তবে মেয়েরাও হিমোফিলিয়ার রোগী হতে পারে। তাই হিমোফিলিয়ার রোগীর সঙ্গে তার বোনের (মামাতো, খালাতো) বিয়ে হলে ছেলে ও মেয়ে উভয়েরই রোগী হওয়ার ঝুঁকি থাকে। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, প্রতি তিনজন হিমোফিলিয়ার রোগীর মধ্যে অন্তত একজন রোগী বংশানুক্রমে সঞ্চারিত না হয়ে নতুনভাবে আক্রান্ত হয়।

হিমোফিলিয়ার প্রকার : হিমোফেলিয়া তিন প্রকার -

১. হিমোফিলিয়া- এ : ক্লটিং ফ্যাক্টর ৮ এর ঘাটতির জন্য  হয়ে থাকে। একে বলা হয় ক্লাসিক্যাল হিমোফেলিয়া।
২. হিমোফিলিয়া-বি: যা ক্লোটিং ফ্যাক্টর ৯ এর ঘাটতির জন্য হয়ে থাকে। একে ক্রিসমাস ডিজিজ ও বলা হয়ে থাকে।
৩.হিমোফেলিয়া -সি : ক্লোটিং ফ্যাক্টর ১১ এর অভাবে হয়ে থাকে।

হিমোফিলিয়া রোগের সাধারণ লক্ষণ

প্রলম্বিত রক্তক্ষরণের প্রবণতাই হচ্ছে হিমোফিলিয়া রোগের প্রধান লক্ষণ। সেটা বিভিন্নভাবে হতে পারে --
. সাধারণত বাচ্চার বয়স ৬ মাসের আগে এ রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায় না। তবে অনেক সময় বাচ্চা ভূমিষ্ট হওয়ার পর নাড়ি কাটা থেকে প্রচুর রক্তপাত এ রোগের লক্ষণ প্রকাশ করে।
. বাচ্চা যখন হাত পা ছুড়তে/হামাগুড়ি দিতে শিখে তখন অস্থি সন্ধিতে স্বতঃস্ফূর্ত রক্তক্ষরণ হয়ে হাঁটু, কনুই, পায়ের গোড়ালি ফুলে যায় ও পেশিতে রক্তক্ষরণের ফলে কালো দাগ দেখা যায়। তখন বাচ্চা প্রচন্ড কান্নাকাটি করে, হাত পা ছোড়া ও খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দেয়।
. তাছাড়া ছেলেবেলায় খেলতে গিয়ে, পড়ে গিয়ে ব্যথা হওয়া, হাঁটু ফুলে যাওয়া, কেটে গিয়ে রক্ত বন্ধ না হওয়া, খৎনা করার পর রক্তক্ষরণ বন্ধ না হওয়া এ রোগের লক্ষণ প্রকাশ করে।

. অনেক সময় প্রথম রোগটি ধরা পড়ে দাঁত পড়ার সময়  অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের মাধ্যমে।
.  খাদ্যেনালী দিয়ে,  নাক দিয়ে, প্রসাব দিয়ে রক্ত পরা খুবই সাধারণ লক্ষন হিসেবে ডাক্তারদের কাছে আসে । মেয়েদের মাসিকের সময় অতিরিক্ত রক্তপাত ও একটা লক্ষন।

রক্তক্ষরণের মাত্রা নির্ভর করে আঘাতের পরিমাণ এবং রক্ত জমাট বাঁধার উপাদানের পরিমাণের ওপর। যদি এই উপাদানের পরিমাণ ১ শতাংশের কম হয়ে থাকে, তবে মারাত্মক ধরনের হিমোফিলিয়া হয়, যাতে খুব সামান্য আঘাত বা বিনা আঘাতেও প্রচুর রক্তক্ষরণ হওয়ার ঝুঁকি থাকে। আর উপাদানের পরিমাণ ৫ শতাংশের বেশি থাকলে তাকে সাধারণ মাত্রার হিমোফিলিয়া বলা হয় এবং ১ থেকে ৫ শতাংশের মাঝামাঝি থাকলে মধ্যম মাত্রার হিমোফিলিয়া বলা হয়।এসব ক্ষেত্রে রক্তপাত কম হয়।

হিমোফেলিয়া  রোগের জন্য পরীক্ষা নিরীক্ষাঃ

রোগীর লক্ষনসমূহ বিবেচনা করিয়া ডাক্তারগন কিছু প্রাথমিক পরীক্ষা নিরীক্ষা করে থাকেন।
১। Bleeding time
২। Prothombin time
৩।  Activated partial thromboplastin time
৪।  platelet count

৫।  Facts essay -খুবই জরুরি। প্রাথমিক পরীক্ষা নিরীক্ষা স্বাভাবিক হলেও অনেক সময় ডাক্তারগন এই পরীক্ষাটা করে থাকেন। এই পরীক্ষার উপর নির্ভর করে রোগীর রোগের তীব্রতা বোঝা যায় ।  ফ্যাক্টর এর পরিমাণের উপর ভিত্তি করে হিমোফেলিয়ার তীব্রতা  কে তিন ভাগে করা হয়।

Type.                           % of facts level
------------------------------------------------------------------
Severe.                       < ১ %
------------------------------------------------------------------
Moderate.                   ১-৫ %
------------------------------------------------------------------
Mild.                            ৫- ৩০%

পরবর্তী পরীক্ষা সমূহ হলঃ-
৬। Molecular Generic--মলিকুলার লেভেলে রোগ নির্নেয়র করে।
7. Mutation analysis - ক্রমোজমের কোথায় পরিবর্তন হয়েছে তা বলে দেয়। 
৭। Carrier detection - এই রোগের বাহক নির্নয় করে।
8। Perinatal diagnosis by amnoicentesis অথবা  CVS ( chorionic villus sampling) -এই পরীক্ষার মাধ্যমে জন্ম গ্রহণের আগেই ( ১২ সপ্তাহ বয়সের অনাগত শিশুর) জানা যায় অনাগত শিশুর হিমোফেলিয়া হবে কিনা।

চিকিৎসাঃ

হিমোফিলিয়া একটি জটিল রোগ। এখন পযন্ত এই রোগের স্থায়ী কোনো নিরাময়যোগ্য চিকিৎসা নেই, কিন্তু তাৎক্ষণিকভাবে উপসর্গ উপশমের ব্যবস্থা অবশ্যই রয়েছে। সময়মতো রোগটি শনাক্ত করা না হলে এবং রক্তক্ষরণ বন্ধ করে সম্ভাব্য জটিলতার হাত থেকে রক্ষা করতে না পারলে কোনো কোনো ক্ষেত্রে রোগীর তাৎক্ষণিক মৃত্যুও হতে পারে অথবা ধীরে ধীরে যেতে পারে অভিশপ্ত পঙ্গুত্বের দিকে।

হিমোফিলিয়া রোগের চিকিৎসা প্রধানত প্রতিরোধমূলক। এ রোগতে  নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয়। রক্তক্ষরণ বন্ধ করা, সম্ভাব্য জটিলতার চিকিৎসা করা এবং পুনর্বাসন করাই এ রোগ নিয়ন্ত্রণের একমাত্র উপায়।  তবে মনে রাখতে হবে সঠিক সময়ে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করলে হিমোফিলিয়া আক্রান্ত একটি শিশুর আর দশটি স্বাভাবিক শিশুর মতো বেড়ে উঠতে এবং স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারবে। হিমোফেলিয়া আক্রান্ত এথলেটদের অলিম্পিকে অংশগ্রহণ করা এর একটা প্রকৃষ্ট  উদাহরণ।

১. রক্তক্ষরণের জায়গা ব্যান্ডেজ করা। প্রয়োজনে Amino caproic acid  প্রয়োগ করা।
২. বেশি রক্তক্ষরণের কারনে  এনিমিয়া হলে বিশুদ্ধ রক্ত সঞ্চালন করা।
৩. বেদনানাশক ওষুধ দেয়া কিন্তু অ্যাসপিরিন গোত্রের কোনো ওষুধ দেয়া যাবে না কারণ এতে রক্তক্ষরণের প্রবণতা বাড়ে।
৪. অ্যামাইনোক্যাপ্রোয়িক এসিডের সহায়তায় দাঁত তুলতে হবে যদি প্রয়োজন হয় এবং অবশ্যই কোনো ভালো হাসপাতালে তা করতে হবে।
৫. যে কোনো শল্য চিকিৎসার আগে ফ্যাক্টর রিপ্লেসমেন্টের ব্যবস্থা নিতে হবে।
৬. হাঁটু বা অন্য অস্থিসন্ধি ফুলে গেলে ২৪-৩৬ ঘণ্টা বিশ্রামে থাকতে হবে এবং তারপর যতশীঘ্র সম্ভব নাড়াচড়া না করলে অস্থিসন্ধি শক্ত হয়ে যেতে পারে। এক্ষেত্রে প্রয়োজনে ফিজিওথেরাপির সাহায্য নিতে হবে।
৭.হিমোফিলিয়া রোগীর মানসিক এবং ব্যক্তিত্ব বিকাশের দিকে বিশেষ লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন। অভিভাবকের অবহেলা বা অযত্ন এসব রোগীর মনে গভীর দাগ কাটতে পারে। সামাজিকভাবে যথাযথ পুনর্বাসনও চিকিৎসার একটা অংশ।  হালকা ব্যায়াম এবং সংঘর্ষপূর্ণ নয় এমন খেলাধুলা অনুমোদন করা যেতে পারে।

. ফ্যাক্টর পরিসন্চালন করা ও অন্যান্য ঔষধ

    ক) Factor concentrates --- এখন পযর্ন্ত এটাই হিমোফেলিয়ার চিকিৎসার আদর্শ ঔষধ। বাজারে  বিভিন্ন দেশের তৈরী ফ্যাক্টর ১, ফ্যাক্টর -৭, ফ্যাক্টর -৮, ফ্যাক্টর -১১ ও ফ্যাক্টর -১৩ পাওয়া যায়।  এই ঔষধ শিরাতে দেওয়া হয়।

খ)  Prothrombin complex concentrate (PCC)- এটা  মানুষের রক্ত থেকে তৈরি  হয়ে থাকে।এই তরলে একসাথে অনেক গুলো  ফ্যাক্টর থাকে যেমন ফ্যাক্টর ২, ৭,৯ এবং  ১০।  ইহা শিরাতে দেওয়া হয়।

গ)  Fresh frozen plasma (FFP)- এটা ও  মানুষের রক্ত থেকে তৈরি  করা হয়।এই তরলে একসাথে সকল গুলো  ফ্যাক্টর থাকে।   ইহা শিরাতে দেওয়া হয়, তবে ঠিকমতো হিসাব না করলে শরীরে অধিক পানি জমে যেতে পারে ।

ঘ) Cryoprecipitate- এটা মানুষের রক্ত থেকে  তৈরী আর একটি পদার্থ, যাতে ফ্যাক্টর ১  ও ৭ থাকে।

ঙ) Desmopressin - এটা  একটি হরমোন যা রক্তে ফ্যাক্টর -৮ এর পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। এটাও শিরাতে দেওয়া হয়।

চ) Antifibrinolytic drugs -ফিব্রিনকে ভাঙ্গার সাহায্য করে। এটা দাঁত উঠানো, সার্জারি এবং  ফ্যাক্টর -১১ এর অভাবে হওয়া হিমোফেলিয়াতে বেশি কার্যকরী।

ছ) Fibrin glue--দাঁত তোলা এবং বাহিরের রক্তপাত বন্ধ করতে বেশি  ব্যাবহার হয়।

জ) Platelet transfusions --মাঝে মাঝে ফ্যাক্টর -৫ এর অভাবে ব্যাবহৃত হয়।

ঝ) Vitamin K-- ভিটামিন -কে নির্ভরশীল ফ্যাক্টরের অভাব থাকলে এই ভিটামিন টা কাজ করে।

ঞ) Hormonal Contraceptives,Intra-uterine devices (IUDs) মেয়েদের মাসিকের সময় অতিরিক্ত রক্তপাত বন্ধ করতে মেয়েদের খাওয়ার পিল ব্যাবহার করা হয়।

হিমোফিলিয়া রোগ প্রতিরোধ।

যাদের বংশে হিমোফিলিয়া আছে, তাদের পরিবারের সদস্যদের জিনগত পরীক্ষা-নিরীক্ষা, কাউন্সেলিং ও জন্মপূর্ব স্ক্রিনিং পরীক্ষার মাধ্যমে আগেই ধারণা করা যায় অনাগত সন্তানের হিমোফিলিয়া হতে পারে কি না। আর গর্ভধারণের আগেই মা রোগটির বাহক কি না তা সাধারণ পরীক্ষার মাধ্যমেই জানা যায়। বাংলাদেশেই এখন সন্তান গর্ভে থাকা অবস্থায়ই হিমোফিলিয়াসহ অন্য কোনো রোগ আছে কি না তা জানার পরীক্ষা-নিরীক্ষা হচ্ছে। আগে থেকে জানা গেলে মা-বাবা সিদ্ধান্ত নিতে পারেন তাঁরা অনাগত সন্তানকে পৃথিবীতে আনবেন কি না। মনে রাখতে হবে, হিমোফিলিয়া রোগ একেবারে সারানোর কোনো চিকিৎসা এখনো আবিষ্কার হয়নি।

হিমোফেলিয়া  চিকিৎসার জন্য  প্রতিষ্ঠানঃ

হিমোফিলিয়া রোগীর চিকিৎসা বিশেষজ্ঞ পর্যায়ে করে থাকেন রক্তরোগ বিশেষজ্ঞ বা হেমাটোলজিস্টরা।শিশুদের চিকিৎসার  জন্য শিশু হেমাটলজি বিভাগ রহিয়াছে -ঢাকাতে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল ইউনিভার্সিটি, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে, ঢাকা শিশু হাসপাতাল ছাড়াও মিডফোর্ড হাসপাতাল। ঢাকার বাহিরে বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে, রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ও  ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শিশু হেমাটলজি বিভাগ রহিয়াছে এবং চিকিৎসা দেওয়া হয়।

তাহা ছাড়া সাধারণ পর্যায়ে যে কোনো প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ডাক্তারই রোগটি সম্পর্কে ভালোভাবে অবহিত থাকলে এ রোগের চিকিৎসা করতে পারেন। বয়স্কদের জন্য ঢাকাতে  বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের হেমাটোলজি বিভাগ, ঢাকা মেডিকেল কলেজের হিমাটোলজি বিভাগ ছাড়াও সকল মেডিকেল কলেজে হেমাটলজি বিভাগে এই রোগের চিকিৎসা করা হয়।

হিমোফেলিয়া চিকিৎসায় আমাদের লক্ষ্য ও আশাবাদঃ

হিমোফেলিয়া চিকিৎসার জন্য জিন থেরাপি, অধিক সময় ধরে  কর্মক্ষম ফ্যাক্টর প্রভৃতি নিয়ে গবেষণা চলিতেছে। বিজ্ঞানীরা অনেক দুর এগিয়ে গেছেন। আশা করা যায় অচিরেই একটা সুখবর আসবে। তদুপরি  মুখে খাওয়ার ফ্যাক্টর, ফ্যাক্টরের সহযোগী ঔষধ আবিষ্কার ই আমাদের টার্গেট। এসবের আবিষ্কার হলে হিমোফেলিয়ার রোগীদের কষ্ট প্রশমিত হবে।

উপসংহারঃ

হিমোফেলিয়া অনিরাময় যোগ্য রোগ। তবে ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ এর মত এদের সংখ্যা এত বেশি নয়। এই রোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে আরো উন্নতি করার জন্য গবেষণা চলিতেছে। আশাবাদী হওয়ার মত যতেষ্ট উন্নতি হয়েছে, তবে আমাদের লক্ষ্য আরো দুরে।

Comments

Popular posts from this blog

বাচ্চা মোটেই খেতে চায় না।  কী করবেন ?

বাচ্চা মোটেই খেতে চায় না।  কী করবেন? ডাঃ অাশীষ কুমার ঘোষ শিশু ও শিশু রক্তরোগ বিশেষজ্ঞ  সহকারী অধ্যাপক শিশু হেমাটলজি ও অনকোলজি বিভাগ জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইন্সটিটিউট ও হাসপাতাল সিনিয়র কনসালট্যান্ট (টেলি -মেডিসিন) Fan Jingle Medical Operation, Hong Kong. জন্মের শুরু থেকে ছ’মাস পর্যন্ত বাচ্চা কেবলমাত্র মায়ের বুকের দুধ খাবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নিদানও তাই। স্তন্যপানই শিশুর  পর্যন্ত। মায়ের দুধই যাবতীয় ভিটামিনস (কেবল ভিটামিন ডি আলাদা দিতে হবে), মিনারেলস ও প্রয়োজনীয় পুষ্টি জোগাবে। মায়ের দুধের বিকল্প ছ’মাস বয়স পর্যন্ত, সারা পৃথিবীতেই আর কিছু নেই। কিন্তু ছ’মাসের পরে শুধু বুকের দুধে বাচ্চার সামগ্রিক পুষ্টি মোটেই সম্ভব নয়। ছয় মাসের পরে মায়ের বুকে দুধ যথেষ্ট নয়, কেন? উঃ কারণ, হু-র বিভিন্ন পরীক্ষা ও রাসায়নিক বিশ্লেষণে ৫৫০ মিলি বুকের দুধে ক্যালরি (ঘাটতি ৬০%), আয়রন (ঘাটতি ৯৫%), প্রোটিন (ঘাটতি ৪৫%), জিঙ্ক ও ভিটামিন এ-র (ঘাটতি ৯০%) লক্ষণীয় ঘাটতি প্রমাণিত। বিশেষ করে ছয় থেকে আট মাস বয়সে আয়রন আর জিঙ্কের ঘাটতিই সবচেয়ে প্রকট। এই বয়সের একটি শিশুর আয়রন প্রয়োজন একজন প্রাপ্তবয়স্কের তুলনায় নয় গুণ ব

Child Cancer Specialist of Dhaka.

  Dr. Ashis Kumar Ghosh Cancer/Oncology specialist Assistant Professor Department of Pediatric Hematology and Oncology National Institute of Cancer Research and Hospital Expertise:  Pediatric Hematology, Pediatric Oncology, Rare Childhood Cancer and Pediatric Medicine Tel- 01712685509   Video Consultation/Online Consultation by Whatsapp - 01712685509 (On prior appointment)     Chamber: 1         Health and Hope Hospital  (Sunday and Wednesday )                                      152/2/G Green Road. Pantho Path. Dhaka-1205                                 09611996699, 01611-216232 Chamber: 2         Padma Path  (Saturday and Tuesday)                                 7  Darusalam Road. Mirpur -1                                 Tel: 9020378, 01975664433 1 .  Medulloblastoma: A Common Pediatric Tumor: Experience of a Tertiary Care Cancer Center of Bangladesh . https://www.semanticscholar.org/paper/Medulloblastoma%3A-A-Common-Pediatric-Tumor%3A-of-a-of-Gh