Skip to main content

সিজারিয়ান সেকশন


বন্দ হোক অপ্র‌য়োজনীয় সিজারিয়ান সেকশনের

সন্তান জন্মদান একটি প্রকৃতি নির্ধারিত স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া। মেয়েরা কম বেশী ২৭০ দিন গর্ভধারণের পর যোনীপথে সন্তান প্রসব করেন - এটাই প্রকৃতির নিয়ম।
তাই যোনীপথে সন্তান বেরিয়ে আসাকে নরমাল বা স্বাভাবিক ডেলিভারী বলা হয়। বিজ্ঞান বলছে শুধুমাত্র ১০-১৫ শতাংশ ক্ষেত্রে ডেলিভারী যোনীপথে হবে না, সেক্ষেত্রে তলপেট দিয়ে জরায়ু কেটে নবজাতককে বের করতে হবে। এই অপারেশনটির নামই হচ্ছে সিজারিয়ান সেকশন বা সি-সেকশন।


এখানে কোন দ্বিমত নেই যে, সিজারিয়ান সেকশন একটি জীবন রক্ষাকারী পদ্ধতি। এই পদ্ধতিটি কোথায়-কখন প্রয়োগ করতে হবে অথবা হবে না, চিকিৎসা বিজ্ঞানে তা পরিষ্কারভাবে বলা আছে । যেখানে প্রয়োজন সেখানে সময়মতো সিজারিয়ান করতেই হবে, নইলে মা-নবজাতকের একজন বা উভয়ের মৃত্যু হতে পারে, অথবা মারাত্মক শারীরীক জটিলতা দেখা দিতে পারে। সাধারণভাবে একটি দেশের সিজারিয়ানের হার নির্দেশ করে, সে দেশের প্রসূতিদের জন্য জীবনরক্ষাকারী ‘জরুরী প্রসূতি সেবা’ কতখানি সহজলভ্য। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, একটি দেশের সি-সেকশনের হার ১০-১৫ শতাংশের আশেপাশে থাকা উচিৎ।
এই আলোচনার সূত্রপাত হচ্ছে একটি উদ্বেগ থেকে, আর তা হলো অতিরিক্ত সি-সেকশন নিয়ে।
বাংলাদেশে সি-সেকশনের হার উর্দ্ধমূখী। ২০০৪ সালে এই হার ছিলো বছরে মোট ডেলিভারীর ৫ শতাংশ, ২০০৭ সালে ৯ শতাংশ, ২০১১ তে ১৭ শতাংশ এবং ২০১৪ সালে ২৩ শতাংশ। এই হার বৈশ্বিক গড়ের চেয়ে বেশী তো বটেই, এশিয়া ও ইউরোপের গড়ের চাইতেও বেশী। অপ্রয়োজনীয় সি-সেকশন জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যের অবস্থার উন্নতি কিংবা মাতৃমৃত্যু কমানোর ক্ষেত্রে কোন অবদানতো রাখেই না, বরং সি-সেকশনের গুরুতর শারীরীক, মানসিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে যার ভূক্তভোগী প্রসূতি ও তার পরিবার।
আরো চিন্তিত হবার বিষয় হচ্ছে, বাংলাদেশে প্রাইভেট ক্লিনিক গুলোতে প্রায় ৮০ শতাংশ ডেলিভারীই হচ্ছে সি-সেকশনের মাধ্যমে, যেখানে সরকারী হাসপাতালে এই হার ৩৮ শতাংশ। আবার দেখা যাচ্ছে, প্রসূতিরা যত ধনী তাদের মধ্যে সি-সেকশনের হারও তত বেশী । স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগে, যদি প্রয়োজন ব্যতিরেকে সি-সেকশন করা না হয়ে থাকে, তাহলে হাসপাতালের রকমভেদে সি-সেকশনের হার ভিন্ন হবে কেন ?
সি-সেকশন একটি বিশেষ ব্যবস্থা এবং তার অসংখ্য পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া আছে । যেহেতু এটি একটি গুরুতর অপারেশন, তাই অপারেশন চলাকালীন ও পরবর্তী জটিলতা হতে পারে। পূর্ণাঙ্গ বা আংশিক অজ্ঞান করে এই অপারেশন করতে হয় বলে, এনেসথেসিয়া সম্পর্কিত জটিলতাগুলো হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে, সি-সেকশন পরবর্তীকালে প্রসূতি মানসিক চাপ, অতৃপ্তি, বাচ্চার সাথে দুর্বল সম্পর্ক ইত্যাদি সমস্যায় ভোগেন। অপারেশনের ক্ষত থেকে বন্ধ্যাত্ব, এবং পরবর্তী গর্ভাবস্থায় গর্ভপাত, গর্ভফুলের অবস্থান সংক্রান্ত নানান জটিলতা এবং অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। বিভিন্ন দেশে দেখা গেছে বেশী অপ্রয়োজনীয় সি-সেকশনের সাথে, বেশী নবজাতক ও শিশু মৃত্যু এবং বেশী প্রি-টার্ম (সময়ের আগে জন্মানো) ডেলিভারী সম্পর্কযুক্ত। এ ছাড়াও প্রসূতি ও পরিবারের সদস্যদের পারিবারিক, কর্মক্ষেত্রের ও সামাজিক দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয় । তাছাড়া নরমাল ডেলিভারীর চাইতে সি-সেকশন অনেক বেশী ব্যয়বহুল।
অনেক প্রসূতিবিদই বলেছেন আজকালকার অনেক মা (বিশেষ করে যারা প্রথমবারের মত মা, শহরবাসী ও শিক্ষিত) স্বপ্রণোদিত হয়ে সি-সেকশন এর মাধ্যমে সন্তান জন্ম দিতে চাচ্ছেন । তাঁরা হয়তো প্রসব বেদনা সহ্য করার মতো মানসিক শক্তি সঞ্চয় করতে পারেন না। অধিকারবাদীরা বলেন আমার শরীর, আমার ইচ্ছা, আমার সিদ্ধান্ত আমি কিভাবে ডেলিভারী করাবো। আমার বক্তব্য হচ্ছে, অন্তত এক্ষেত্রে যেখানে মারাত্মক স্বাস্থ্য ও অন্যান্য ঝুঁকি এবং জীবন-মৃত্যুর প্রশ্ন জড়িত সেখানে সিদ্ধান্ত নেবার অধিকারের আগে তথ্যের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। অর্থাৎ প্রসূতি মা-টিকে সি-সেকশনের সকল ভালো মন্দ ও পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া সমূহ নির্মোহভাবে ব্যাখা করতে হবে।
তথ্যপ্রদানের এই অবশ্যকরণীয় কাজটি সুচিকিৎসার অংশ। বহু দেশে চিকিৎসা শুরুর আগে পূর্বাপর ভালো-মন্দ পূর্ণাঙ্গভাবে রোগীকে না বলা কিংবা উদ্দেশ্য প্রনোদিত ভাবে বা আংশিক তথ্য উপস্থাপনের মাধ্যমে রোগীর সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এর দায়িত্ব কার? আমাদের শ্রদ্ধাভাজন প্রসূতিবিদরা নিশ্চয়ই মানবেন যে, সি-সেকশন আর দশটা ওভার-দি-কাউন্টার ওষুধের মতো পণ্য নয় যে রোগী চাইলেই তথাকথিত অধিকারের নামে তা দিয়ে দেওয়া উচিত।
একটি পণ্য হিসাবেও স্বাস্থ্যসেবা আলু-পটলের মতো সাধারণ পণ্য নয় - যেখানে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে ক্রেতা অনেকখানিই স্বাধীন। সাধারণ বাজারের ধারণা বা নির্ণায়ক চিকিৎসা সেবার বাজারের ক্ষেত্রে একটু ভিন্ন। এখানে চাহিদা প্রবলভাবে প্রভাবিত হবার সুযোগ থাকে বিক্রেতা (এক্ষেত্রে প্রসূতিবিদ) দ্বারা। প্রসূতিবিদ, সি-সেকশন করতে হবে কি হবে না সেই মতামত কতটা নির্মোহভাবে দিতে পারছেন সেটা বহুলাংশে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে। এই সমাজের একজন রক্তমাংশের মানুষ হিসাবে, প্রতিটি প্রসূতিবিদের ভেতরে - চিকিৎসক স্বত্বা ও বিক্রেতা স্বত্বা প্রতিনিয়ত যুদ্ধ কর্। ে চিকিৎসক স্বত্বা যেখানে জয়ী হয়, সে সমস্ত পরিস্থিতিতে প্রসূতিবিদ মা কে স্বাভাবিক ডেলিভারীর ভালো দিকগুলো বোঝান, মমতাভরে উৎসাহ দেন, ধৈর্য্য ধরে প্রসববেদনা সহ্য করতে বলেন, জটিলতা দেখা দিচ্ছে কিনা তা সার্বক্ষণিক মনিটরিং এর ব্যবস্থা করেন । আর, বিক্রেতা স্বত্বা যেখানে জয়ী হয় সেখানে প্রসূতিবিদ স্বাভাবিক ডেলিভারীর জন্য চিকিৎসা বিজ্ঞানের বিধিসম্মত চেষ্টাগুলো না করেই সি-সেকশনের জন্য তাগিদ দেন, মা ও পরিবারকে ভয় দেখান এই বলে যে, মা বাচ্চার কিছু হলে তাঁর দায়িত্ব নেই, বলেন যে দীর্ঘক্ষণ তিনি অপেক্ষা করতে পারবেন না, ইত্যাদি। এই পরিস্থিতিতে অনেক ক্ষেত্রেই প্রসূতি ও পরিবার ভয় পেয়ে যান, ঝুঁকি নিতে চান না,এবং অনেকটা নিরূপায় হয়ে কাগজে সই করেন সি-সেকশনের পক্ষে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে, স্বাস্থ্য-মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব ছিলো, প্রসূতিবিদদের মনোজগতের এই নিয়ত দ্বন্দ্বে এবং দোলাচলে যেনো বিক্রেতা স্বত্তা জয়ী হতে না পারে সে জন্য প্রক্রিয়াগত ও আইনী কাঠামো তৈরী ও কার্যকর রাখা । দুঃখজনকভাবে হলেও সত্য, তারা তা করছেন না। পরিস্থিতি এতোটাই আশংকাজনক যে কোন কোন জেলা ও উপজেলা শহরে প্রশিক্ষিত ডাক্তার নন এমন মানুষেরা প্রাইভেট ক্লিনিক খুলে সিজারিয়ান অপারেশন করছেন, এমনকি অজ্ঞানবিদের কাজও তারাই করছেন। এই ধরণের কাজ ফৌজদারী অপরাধ। মন্ত্রণালয়ের এই ‘কাকের চোখ বন্ধ করে রাখার নীতি’ ও স্থবিরতার সুযোগে অসাধু, নীতিহীন স্বাস্থ্য-পণ্য ব্যবসায়ীরা কোটি টাকার ব্যবসা করছেন (বাংলাদেশে অতিরিক্ত সি-সেকশনের আনুমানিক বাজার বছরে প্রায় ৪৫০ কোটি টাকা), সাধারণ মানুষ ভুগছেন শারীরীক, মানসিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ভোগান্তিতে, চিকিৎসক-রোগী সর্ম্পক নষ্ট হচ্ছে, কারো কারো লাগামহীন অসততার কারণে সব সম্মানিত প্রসূতিবিদ পড়ছেন বিব্রতকর ইমেজ সংকটে।
আমি মনে করি, এই সমস্যাটির সমাধানের ক্ষেত্রে সরকারের পাশাপাশি, প্রসূতিবিদদের সংগঠন অবসটেট্রিক এন্ড গাইনিকলজিকেল সোসাইটি অব বাংলাদেশ (ও জি এস বি) এই মুহূর্তে সবচেয়ে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেন। মন্ত্রণালয়কে একটি বাস্তবসম্পন্ন মান-নিয়ন্ত্রণ কাঠামো ও ব্যবস্থা (যার অংশ হতে পারে নিয়মিত ক্লিনিক্যাল অডিট, এক্রেডিটেশন ইত্যাদি) তৈরীতে সহযোগিতা প্রদানের পাশাপাশি প্রসূতিবিদদের দক্ষতা বৃদ্ধি, মান নিয়ন্ত্রণ, স্বীকৃত ক্লিনিক্যাল প্রটোকল মেনে চলা, এবং নৈতিকতা রক্ষার ক্ষেত্রে ও জি এস বি এর সামষ্টিক উদযোগ খুবই কার্যকর হতে পারে । একটা বিষয় সুস্পষ্ট, বাইরের বিভিন্ন পক্ষের যতই নিয়ন্ত্রণ থাকুক না কেন শেষ বিচারে প্রসূতিবিদকেই সিদ্ধান্ত দিতে হবে ডেলিভারিটা নরমাল হবে না সিজার হবে। ব্যক্তি প্রসূতিবিদ অথবা সামষ্টিকভাবে প্রসূতিবিদদেরই (ওজিএসবি এর মাধ্যমে) নিজেদের ওপর এই নিয়ন্ত্রণ আনতে হবে।
অনেক দেশে ইনসিউরেন্স পদ্ধতি চালু আছে যেখানে কোম্পানী গুলোর মাধ্যমে মানুষ নিয়মিত প্রিমিয়াম দিয়ে স্বাস্থ্য সেবার ব্যয় নির্বাহ করে। ইনসিউরেন্স কোম্পানীগুলো সেখানে নিজেদের স্বার্থরক্ষার জন্যই কঠোর মান-নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করার চেষ্টা করে।
অপ্রয়োজনীয় সি-সেকশন ইস্যুতে করণীয় নিয়ে অনানুষ্ঠানিক আলোচনার জন্য কিছুদিন আগে ওজিএসবি আমাকে তাঁদের দপ্তরে ডেকেছিলেন। উপস্থিত সকল বয়োজ্যেষ্ঠ প্রসূতিবিদের সম্মিলিত মনোভাব যদি আমি বুঝতে পেরে থাকি, তাহলে স্পষ্টতই, (ক) তাঁরা বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান সি-সেকশনের উচ্চ হার নিয়ে চিন্তিত, (খ) এর কারণে ঢালাওভাবে তাঁদের ওপর যে অনৈতিকতার অভিযোগ আসছে তা নিয়ে তাঁরা খুবই বিব্র্রত, (গ) সর্বত্র মান-নিয়ন্ত্রনহীন ভাবে যেভাবে সি-সেকশন হচ্ছে তার বেশ কিছু মারাত্মক জটিলতার আশংকাজনক বৃদ্ধি ইতোমধ্যেই তাঁরা তাঁদের পেশাগত চর্চায় নিয়মিত দেখতে পাচ্ছেন, (যেমন, সিজার পরবর্তী গর্ভধারণে জরায়ুমুখে গর্ভফুল চলে আসা যা অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ এবং নবজাতকের মৃত্যুর কারণ হতে পারে), (ঘ) এই পরিস্থিতির আশু নিয়ন্ত্রণে, দায়িত্বশীল পেশাজীবী সংগঠন হিসেবে তাঁরা সরকার এবং অন্য সবার সাথে কাজ করতে চান কিন্তু স্পষ্ট বূঝতে পারছেন না আসলেই কার্যকর সমাধানগুলো কি এবং কোথায়, কিভাবে সেগুলোর পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন শুরু করতে হবে।
অপ্রয়োজনীয় সিজারিয়ান অপারেশন বন্ধ করতে হলে নীচের প্রস্তাবনাগুলো বিবেচনায় নেয়া যেতে পারে ।
১। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে কঠোরভাবে চিকিৎসা সেবার মান-নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এ জন্য প্রয়োজনীয় আইন করতে হবে ও তার যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
২। সুনির্দিষ্ট মানদন্ড মেনে চলার ভিত্তিতে হাসপাতাল, ক্লিনিক ইত্যাদির লাইসেন্স প্রদান ও নবায়ন করার বিধান চালু করতে হবে এবং সঠিকভাবে শিক্ষিত ও প্রশিক্ষিত প্রসূতিবিদ ছাড়া অন্য কারো অপারেশন করা বন্ধ করতে হবে। সিজারিয়ানের অনুমতিপ্রাপ্ত প্রসূতিবিদ ও ক্লিনিক/হাসপাতালের একটি ডাটাবেইস খুব অল্প সময়ের মধ্যেই তৈরী করা সম্ভব।
৩। প্রসূতিবিদদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ, সার্বক্ষনিক নিরীক্ষণ, জবাবদিহিতা ও পুনঃপ্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।
৪। সরকারী-বেসরকারী সকল হাসপাতাল, ক্লিনিকগুলোকে চিকিৎসা সংক্রান্ত তথ্য নিয়মিতভাবে সংরক্ষণ ও রিপোর্টিং পদ্ধতির আওতায় নিয়ে আসতে হবে।
৫। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ডি এস এফ কর্মসূচীতে, সিজারিয়ান অপারেশন ও নরমাল ডেলিভারী ভাতা একরকম করতে হবে যাতে প্রয়োজনহীন সিজারিয়ান নিরুৎসাহিত হয়।
৬। অত্যাবশ্যক সি-সেকশন এর প্রয়োজনীয়তা ও অনাবশ্যক সি-সেকশনের ক্ষতিকর দিকগুলো তুলে ধরে ব্যাপক প্রচারণা চালাতে হবে। জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে নাগরিক সমাজকে সংগঠিতভাবে একটি কার্যকর ভূমিকা নিতে হবে।
৭। মানদন্ড নির্ধারণ, মান-নিয়ন্ত্রণ, নিরীক্ষণ ও নিয়মিত তত্ত্বাবধান ও নৈতিকতা নিশ্চিতকরণের ক্ষেত্রে দায়িত¦প্রাপ্ত সংস্থা বাংলাদেশ মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) ও অন্যান্য সংস্থার ক্ষমতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধি ও যুগোপযোগী করতে হবে।
৮। দেশের সকল নরমাল ডেলিভারী মিডওয়াইফদের মাধ্যমে সম্পন্ন করার সরকারী পরিকল্পনাটি সঠিক ও বিজ্ঞানসম্মত হলেও তা দীর্ঘমেয়াদী। এটিকে অগ্রাধিকার দিয়ে বাস্তবায়ন দ্রুততর করতে হবে। অতিরিক্ত সি-সেকশন রোধে এটি একটি ভালো সমাধান কারণ যেহেতু মিডওয়াইফদের কাজ ও দক্ষতার সীমারেখা নরমাল ডেলিভারীতে সীমাবদ্ধ তাই অপ্রয়োজনীয় সি-সেকশনের জন্য তাদের কোন প্রকার বাড়তি প্রনোদনা বা ইনসেনটিভ থাকবেনা।
৯। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সি-সেকশন কেন্দ্রিক বাস্তবতা ভালোভাবে বোঝা দরকার। আসলেই আমাদের সি-সেকশনের হার কত হওয়া উচিত এ বিষয়ে আমাদের নিজস্ব গবেষণা নেই বললেই চলে। যার কারণে ৈেবশ্বিক ও অন্যান্য আঞ্চলিক গড়কেই আমাদের রেফারেন্স হিসাবে ধরতে হচ্ছে। বৈজ্ঞানিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে প্রয়োজনীয় গবেষণা প্রশ্ন সমূহ নির্ধারণ করে, গবেষণার উদযোগ নিয়ে আমাদের জানা-বোঝা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়াকে পূর্ণাঙ্গ ও বাস্তবতা সম্পন্ন করতে হবে।
১০। উপরের সবগুলো সুপারিশ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ওজিএসবি কে পূর্ণাঙ্গভাবে সম্পৃক্ত করতে হবে। এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ তা না হলে অহেতুক ও বিব্রতকর দ্বন্দ্ব তৈরী হবার সম্ভাবনা থেকে যায়। নৈতিকতা ও নিয়ন্ত্রণের পরিবর্তে ভীতির সৃষ্টি হলে জীবনের ঝুঁকির ক্ষেত্রেও সি-সেকসন না করার আশংকা থেকে যাবে।
লেখক : জনস্বাস্থ্যকর্মী হোম / অনলাইন / স্বাস্থ্য ও প্রেসক্রিপশন
/ বন্ধ হোক অপ্রয়োজনীয় সিজারিয়ান অপারেশন।

Comments

Popular posts from this blog

Pineal region pilocytic astrocytoma; an unusual tumor: A cases report

  Dr. Ashis Kumar Ghosh Cancer/Oncology specialist Assistant Professor Department of Pediatric Hematology and Oncology National Institute of Cancer Research and Hospital Expertise:  Pediatric Hematology, Pediatric Oncology, Rare Childhood Cancer and Pediatric Medicine Tel- 01712685509 Pineal region tumors account for <1% of all intracranial neoplasms, of which approximately 14–27% is of pineal parenchymal origin.[ 1 ] Gliomas are very rare in the pineal region. They are thought to arise from the native glial cells of pineal gland or from the adjacent structure.[ 2 ] A wide spectrum of pineal region glial tumors have been described including pilocytic astrocytoma (PA), pleomorphic xanthoastrocytoma, glioblastoma, oligodendroglioma, and ganglioglioma; mainly as case reports. We report one cases of pineal region PA with variable clinical, radiological, and histological features with a review of literature. Case 1: An 8-year-old male child was brought to the Pediatric Hematology and Onc

বিয়ের আগে বরকনের রক্ত পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করতে রিট

বিয়ের আগে বর ও কনের রক্তে থ্যালাসেমিয়া বা মাদকের অস্তিত্ব আছে কিনা তা পরীক্ষা করে মেডিকেল সার্টিফিকেট দাখিলের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় অ্যাডভোকেট সৈয়দা শাহীন আরা লাইলীর পক্ষে রিটটি করেন আইনজীবী একলাছ উদ্দিন ভূঁইয়া। রিটে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, আইন সচিব, স্বাস্থ্য সচিব, পুলিশ মহাপরিদর্শক, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মহাপরিচালককে বিবাদী করা হয়েছে। আইনজীবী একলাছ উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, সংবিধানের ২১ ও ৩২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, নাগরিকের জীবন রক্ষায় রাষ্ট্রকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। আর সে জন্য আদালতের কাছে নির্দেশনা চেয়ে রিটটি করা হয়। রিটে বলা হয়েছে, থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত কোনো ব্যক্তির সঙ্গে বিয়ে হলে তাদের অনাগত সন্তান বিকলাঙ্গ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ ছাড়া দেশে মাদকাসক্তের সংখ্যা প্রায় ৭০ লাখ। এর মধ্যে ৬৫ শতাংশ তরুণ। বিবাহবিচ্ছেদের অন্যতম কারণ এই মাদকাসক্তি। বিভিন্ন সিটি কর্পোরেশনের সালিশি পরিষদের তথ্যানুযায়ী নারীদের অভিযোগের কারণ হচ্ছে পুরুষত্বহীনতা। হেরোইন, ইয়াবা, অ্যালকোহলসহ বিভিন্ন মাদক সেবনে পু

শিশু মাতৃদুগ্ধ পানে পিছিয়ে এশিয়ার শিশুরা।

মাতৃদুগ্ধ পানে এশিয়ার শিশুরা পিছিয়ে। ডাঃ আশীষ কুমার ঘোষ শিশু রক্তরোগ বিশেষজ্ঞ সন্তান জন্ম দেয়ার পরবর্তী একঘণ্টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ সময়। এ সময় নবজাতককে বুকের দুধ পান করাতে না পারলে নবজাতকের জন্য তা প্রাণহানীর কারণ হতে পারে। জানা গেছে, আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া দেশের পাঁচ জনের মধ্যে তিন জন শিশুই (আনুমানিক ৭ কোটি ৮০ লাখ শিশু) জন্মের এক ঘণ্টার মধ্যে মাতৃদুগ্ধ পানের সুযোগ পায় না। তবে দক্ষিণ ও পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলোতে ঠিক সময়ে স্তন্যপানের রীতি অধিক প্রচলিত। সে দিক থেকে অনেক পিছিয়ে এশিয়ার দেশগুলো। মাত্র ৩২ শতাংশ (অর্থাৎ প্রতি তিনজনে দুইজন বঞ্চিত) শিশু জন্মের এক ঘণ্টার মধ্যে মাতৃদুগ্ধ পানের সুযোগ পায়। যার জেরে জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। এমনকি, তৈরি হয় প্রাণ সংশয়ও। স্তন্যপান নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। মঙ্গলবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ওয়েবসাইটে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, এই প্রতিবেদন যথেষ্ট উদ্বেগজনক। শিশুর জন্মের পরের এক ঘণ্টা খুব গুরুত্বপূর্ণ। মাতৃদুগ্ধই হল প্রথম টিকা। সেটা দেরিতে পেলে রোগ সংক্রমণের ঝুঁকি কয়েক গুণ ব