Skip to main content

স্তন ক্যান্সার হতে সাবধান

স্তন ক্যান্সার হতে সাবধান!
ডাঃ আশীষ কুমার ঘোষ

নারীদের নীরব ঘাতক বলা হয় স্তন ক্যান্সারকে। এই গোপন ব্যাধির শিকার হয়ে প্রতি বছর প্রাণ হারান হাজার হাজার নারী। বিশ্বে প্রতি ৮ জনের মধ্যে একজন ব্রেস্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত। পরিসংখ্যানটি আসলেই ভয়াবহ এবং প্রতি ৩৬ জন আক্রান্ত নারীর মধ্যে মৃত্যুর সম্ভাবনা একজনের।





আমাদের দেশে ক্যান্সারে যত নারীর মৃত্যু হয়, তার দ্বিতীয় কারণ ব্রেস্ট ক্যান্সার। স্তন ক্যান্সার আসলে এক ধরনের ম্যালিগন্যান্ট টিউমার, যা স্তনের কোষগুলো থেকে শুরু হয়। স্তন ক্যান্সার এমনই এক ধরনের অসুখ যা প্রতিরোধের সেভাবে কোনো নির্দিষ্ট পদ্ধতি নেই। 

তাছাড়া এই রোগের নির্দিষ্ট কোনো কারণ এখনো জানা যায়নি। তাই কেন এই ম্যালিগন্যান্ট টিউমারটি হয়ে থাকে, যা রূপ নেয় স্তন ক্যান্সারে, তা জানা জরুরি। তবে একাধিক কারণকে স্তন ক্যান্সারের জন্য দায়ী করা হয়ে থাকে। আসুন জেনে নেই কারণগুলো— 

১. অতিরিক্ত মদ্যপান মেয়েদের স্তন ক্যান্সারের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়। স্তন ক্যান্সারের হাত থেকে রক্ষা পেতে চান, তাহলে অবশ্যই মদ্যপান ত্যাগ করুন।

২. অবিবাহিতা, সন্তানহীনা নারীদের মধ্যে স্তন ক্যান্সারের প্রকোপ বেশি।

৩. একইভাবে যারা সন্তানকে কখনো বুকের দুধ পান করাননি তাদের স্তন ক্যান্সার বেশি হয়।

৪. ৩০ বছর বয়স পরে যারা প্রথম মা হয়েছেন, তাদের স্তন ক্যান্সারের প্রবণতা একজন কমবয়সী মা হওয়া নারীর থেকে অনেক বেশি।

৫. বয়স যত বাড়ে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি তত বৃদ্ধি পায়।

৬. অল্প বয়সে বাচ্চা নিলে, দেরিতে পিরিয়ড শুরু হলে, তাড়াতাড়ি পিরিয়ড বন্ধ হয়ে গেলে স্তন ক্যান্সারের প্রকোপ বেড়ে যায়।

৭. একাধারে অনেক দিন জন্ম নিরোধ পিল খেলেও স্তন ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।

৮. মা-খালাদের থাকলে সন্তানদের হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

৯. অস্বাস্থ্যকর ডায়েট স্তন ক্যান্সারের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দিতে পারে। 

স্তন ক্যান্সারের লক্ষণ:

১. সাধারণত ৩০ বছরের পূর্বে এই রোগ কম হয়।

২. বেশিরভাগ রোগী বুকে চাকা নিয়ে ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়।

৩. বুকে চাকা সেই সাথে কিছু কিছু রোগী ব্যথার কথাও বলে থাকে।

৪. কখনো কখনো বুকে চাকা বগলেও চাকা নিয়ে রোগী আসতে পারে।

৫. নিপল ডিসচার্জ এবং নিপল ভেতরের দিকে ঢুকে যাওয়াও এ রোগের লক্ষণ হিসাবে দেখা দিতে পারে।

৬. কিছু কিছু রোগী বুকে ফুলকপির মত ঘা নিয়ে ডাক্তারের কাছে আসে।

৭. অনেক সময় যে বুকে ব্যথা সেদিকের হাত ফোলা নিয়েও আসতে পারে।

৮. এগুলো ছাড়া স্তন ক্যানসার দূরবর্তী কোথাও ছড়িয়ে পড়েছে এমন উপসর্গ নিয়ে আসে যেমন: হাড়ে ব্যথা, মাথা ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, জন্ডিস ইত্যাদি।

 

কিভাবে রোগ নির্ণয় করবেন:

১. মেমোগ্রাম বা স্তনের বিশেষ ধরনের এক্সরে

২. স্তনের আলট্রাসনোগ্রাম

৩. চাকা বা টিউমার থেকে রস নিয়ে পরীক্ষা করলে এই রোগ ধরা পড়বে।

৪. ৩০ বছরের বেশি বয়স হলে নিজে নিজে ব্রেস্ট পরীক্ষা করতে হবে। কোনো চাকা পাওয়া যায় কিনা। চাকা পাওয়া গেলে সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে।

৫. বয়স ৫০-এর উপরে হলে বছরে একবার মেমোগ্রাম করতে হবে।

৬. কোনো প্রকার সন্দেহ হলে ডাক্তারের সাথে দেখা করতে হবে। 

স্তন ক্যান্সারের চিকিৎসা:

সম্ভব হলে সার্জারি করাই উত্তম। তাছাড়া কেমোথেরাপি, রেডিও থেরাপি, হরমোন থেরাপি ইত্যাদি। 

স্তন ক্যান্সার এড়ানোর উপায়:

যেহেতু রোগটির নির্দিষ্ট কোনো কারণ জানা যায়নি। তাই এই রোগ এড়ানোর জন্য কয়েকটি নিয়ম মেনে চলতে হবে।

১. রিক্স ফ্যাক্টর থাকলে সে ক্ষেত্রে মেমোগ্রাফি করুন। যেমন: ফ্যামিলিতে ব্রেস্ট ক্যান্সার থাকলে।

২. ৩০ বছর বয়সের মধ্যে প্রথম সন্তান জন্ম দেয়ার চেষ্টা করুন।

৩. যে সমস্ত নারীরা শিশুদের স্তন্যপান করান, তাদের স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকিও কম থাকে।

৪. টাটকা শাক-সবজি ও ফল খান।

৫. সন্দেহ হলে ক্যান্সার সার্জনের শরণাপন্ন হন।

৬. ধুমপান ও অ্যালকোহল পরিহার করুন।

৭. যিনি রোজ নিয়ম করে শরীর চর্চা করেন, তার স্তন ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনাও কম থাকে।

৮. সমীক্ষা বলছে, সপ্তাহে ৭৫ থেকে ১৫০ মিনিট দ্রুতবেগে হাঁটলে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে। 

মনে রাখবেন প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নিরূপণ করলে এবং চিকিৎসা করলে আপনি অনেক দিন সুস্থ থাকবেন। সার্জারি করার সময় টিউমারটি বগলে লসিকা গ্রন্থিসহ অপসারণ করলে এই রোগ পুনর্বার দেখা দেয়ার সম্ভাবনা খুব কম। 

অসম্পূর্ণভাবে টিউমার অপসারণ করলে এই রোগ আবার হতে পারে। বর্তমানে অপারেশন টেকনোলজি অনেক উন্নতি লাভ করেছে যার ফলে এই রোগের চিকিৎসা এখন বাংলাদেশেই সম্ভব। 

তাছাড়া অ্যাডভান্স ব্রেস্ট ক্যান্সারে এখন টিউমার ফেলে দিয়ে ব্রেস্ট এরিয়া রিকস্ট্রাকশনও করা হচ্ছে।

যদিও নারীদের ব্রেস্ট ক্যান্সার বেশি হয়। তবে সংখ্যায় কম হলেও পুরুষরাও কিন্তু এই রোগের ঝুঁকিমুক্ত।

আইএম

Comments

Popular posts from this blog

Pineal region pilocytic astrocytoma; an unusual tumor: A cases report

  Dr. Ashis Kumar Ghosh Cancer/Oncology specialist Assistant Professor Department of Pediatric Hematology and Oncology National Institute of Cancer Research and Hospital Expertise:  Pediatric Hematology, Pediatric Oncology, Rare Childhood Cancer and Pediatric Medicine Tel- 01712685509 Pineal region tumors account for <1% of all intracranial neoplasms, of which approximately 14–27% is of pineal parenchymal origin.[ 1 ] Gliomas are very rare in the pineal region. They are thought to arise from the native glial cells of pineal gland or from the adjacent structure.[ 2 ] A wide spectrum of pineal region glial tumors have been described including pilocytic astrocytoma (PA), pleomorphic xanthoastrocytoma, glioblastoma, oligodendroglioma, and ganglioglioma; mainly as case reports. We report one cases of pineal region PA with variable clinical, radiological, and histological features with a review of literature. Case 1: An 8-year-old male child was brought to the Pediatric Hematology and Onc

বিয়ের আগে বরকনের রক্ত পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করতে রিট

বিয়ের আগে বর ও কনের রক্তে থ্যালাসেমিয়া বা মাদকের অস্তিত্ব আছে কিনা তা পরীক্ষা করে মেডিকেল সার্টিফিকেট দাখিলের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় অ্যাডভোকেট সৈয়দা শাহীন আরা লাইলীর পক্ষে রিটটি করেন আইনজীবী একলাছ উদ্দিন ভূঁইয়া। রিটে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, আইন সচিব, স্বাস্থ্য সচিব, পুলিশ মহাপরিদর্শক, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মহাপরিচালককে বিবাদী করা হয়েছে। আইনজীবী একলাছ উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, সংবিধানের ২১ ও ৩২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, নাগরিকের জীবন রক্ষায় রাষ্ট্রকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। আর সে জন্য আদালতের কাছে নির্দেশনা চেয়ে রিটটি করা হয়। রিটে বলা হয়েছে, থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত কোনো ব্যক্তির সঙ্গে বিয়ে হলে তাদের অনাগত সন্তান বিকলাঙ্গ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ ছাড়া দেশে মাদকাসক্তের সংখ্যা প্রায় ৭০ লাখ। এর মধ্যে ৬৫ শতাংশ তরুণ। বিবাহবিচ্ছেদের অন্যতম কারণ এই মাদকাসক্তি। বিভিন্ন সিটি কর্পোরেশনের সালিশি পরিষদের তথ্যানুযায়ী নারীদের অভিযোগের কারণ হচ্ছে পুরুষত্বহীনতা। হেরোইন, ইয়াবা, অ্যালকোহলসহ বিভিন্ন মাদক সেবনে পু

শিশু মাতৃদুগ্ধ পানে পিছিয়ে এশিয়ার শিশুরা।

মাতৃদুগ্ধ পানে এশিয়ার শিশুরা পিছিয়ে। ডাঃ আশীষ কুমার ঘোষ শিশু রক্তরোগ বিশেষজ্ঞ সন্তান জন্ম দেয়ার পরবর্তী একঘণ্টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ সময়। এ সময় নবজাতককে বুকের দুধ পান করাতে না পারলে নবজাতকের জন্য তা প্রাণহানীর কারণ হতে পারে। জানা গেছে, আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া দেশের পাঁচ জনের মধ্যে তিন জন শিশুই (আনুমানিক ৭ কোটি ৮০ লাখ শিশু) জন্মের এক ঘণ্টার মধ্যে মাতৃদুগ্ধ পানের সুযোগ পায় না। তবে দক্ষিণ ও পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলোতে ঠিক সময়ে স্তন্যপানের রীতি অধিক প্রচলিত। সে দিক থেকে অনেক পিছিয়ে এশিয়ার দেশগুলো। মাত্র ৩২ শতাংশ (অর্থাৎ প্রতি তিনজনে দুইজন বঞ্চিত) শিশু জন্মের এক ঘণ্টার মধ্যে মাতৃদুগ্ধ পানের সুযোগ পায়। যার জেরে জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। এমনকি, তৈরি হয় প্রাণ সংশয়ও। স্তন্যপান নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। মঙ্গলবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ওয়েবসাইটে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, এই প্রতিবেদন যথেষ্ট উদ্বেগজনক। শিশুর জন্মের পরের এক ঘণ্টা খুব গুরুত্বপূর্ণ। মাতৃদুগ্ধই হল প্রথম টিকা। সেটা দেরিতে পেলে রোগ সংক্রমণের ঝুঁকি কয়েক গুণ ব