Skip to main content

যখন দাহ বা সমাধিস্থ না করে মৃতদেহ রেখে দেওয়াই ধর্মীয় রীতি

যখন দাহ বা সমাধিস্থ না করে মৃতদেহ রেখে দেওয়াই ধর্মীয় রীতি

ডঃ রুখসানা করিম




কঙ্কালের সঙ্গে সহবাস নিয়ে আলোড়ন সংবাদমাধ্যমে | কিন্তু কোথাও কোথাও মৃতদেহ রেখে দেওয়াই ধর্মীয় রীতি | পার্সি বা জরথ্রুষ্টিয়ান বা জোরাস্ট্রিয়ানরা এই বিশ্বাসে বিশ্বাসী | তাঁরা মৃত্যুর পরে দাহ বা সমাধি‚ কোনওটাই করেন না | উঁচু মিনারে মৃতদেহ রেখে দেওয়াই তাঁদের সৎকার | সেই দেহ ভক্ষণ করে শকুনের দল |

প্রাচীন পারস্যে জন্ম জরথ্রুস্টিয়ান দর্শনের | দার্শনিক জরথ্রুস্ট প্রচার করেছিলেন তাঁর মতবাদ | তাঁর অনুগামীদের বলা হয় জরথ্রুস্টিয়ান বা জোরাস্ট্রিয়ান | তাঁদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হল টাওয়ার অফ সাইলেন্স | মৃত্যুর পরে এই উঁচু মিনারে শব রেখে দেয় পার্সিরা |

এই টাওয়ারের কথা প্রথম শোনা যায় খ্রিস্ট পূর্ব পঞ্চম শতকে | তবে মিনার নির্মাণের উল্লেখ আছে নবম খ্রিস্টাব্দে | কিন্তু কেন এই বিশ্বাসের পথিক পার্সিরা ?

প্রাচীন পারস্যের মানুষ ছিলেন অগ্নিহোত্রী বা অগ্নির উপাসক | তাই‚ এই সাগ্নিকদের কাছে আগুন খুবই পবিত্র | সেইসঙ্গে পবিত্র হল পৃথিবী বা ভূমি | অন্যদিকে‚ মৃতদেহকে তাঁরা মনে করেন‚ ‘নাসু’ অর্থাৎ‚ অপবিত্র | সেইসঙ্গে চুল এবং কাটা নখও তাঁদের কাছে অপবিত্র | পার্সিরা মনে করেন‚ পবিত্র অগ্নি এবং ভূমির সঙ্গে অপবিত্র মৃতদেহর যেন স্পর্শ না হয় |

তাই‚ দাহ বা সমাধি‚ দুটোই নিষিদ্ধ পার্সিদের কাছে | কারণ এর দুটোতেই হয় আগুন বা ভূমির সংস্পর্শে আসবে ‘অপবিত্র’ দেহ | তাছাড়া‚ প্রাচীন ইরানিদের বিশ্বাস ছিল‚ মৃত্যুর পরে দেহে প্রবেশ করে অশুভ আত্মা | অশুভ হয়ে যায় পারিপার্শ্বিক | তাই‚ শব রেখে দেওয়া হয় উঁচু সৌধে | ইরানে যখন এই সৌধ যথেষ্ট ছিল না‚ পর্বত শিখরে রেখে আসা হত মানুষের নিথর দেহ | পড়ে থাকা শব ভক্ষণ করত শকুনের ঝাঁক | পড়ে থাকত হাড়গোড় | এক বছর ধরে তা শুকোত রোদে | তারপর তা ব্যবহৃত হত কৃষিকাজের সার হিসেবে |

যে কোনও ধর্মীয় রীতির সূত্রপাতে থাকে বাস্তব এবং সময়পোযোগী কারণ | আপাত নৃশংস হলেও পার্সিদের এই রীতির নেপথ্যে আছে কিছু বাস্তবসম্মত কারণ | পার্সিদের এই রীতির পিছনে আছে মিতব্যয়িতা | এতে কোনও জ্বালানি লাগে না | সমাহিত করার ব্যয়ও নেই | ফলে খরচ কম | তাছাড়া‚ এতে ধনী-দরিদ্র বিভাজনও ধরা পড়ে না |

আরও পড়ুন:  বাকি ছিল এটাই ! ভারতের ব্যাঙ্কনোটও নাকি ওখানে ছাপা হয় ! দাবি চিনের

টাওয়ার অফ সাইলেন্সে দল বেঁধে বসে থাকে শকুন | তবে আশ্চর্যজনক ভাবে‚ সৎকারে আসা মানুষজনকে তারা কখনও আক্রমণ করে না | এই মিনার থেকে যাতে বৃষ্টির জল বাইরে বেরিয়ে না আসতে পারে তার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা থাকত | ওই জল চলে যায় মাটির নীচে গভীর কুয়োয় | এই ব্যবস্থা‚ যাতে টাওয়ার অফ সাইলেন্সের জল দূষিত করতে না পারে চাষ-জমিকে |

পার্সিদের অন্ত্যেষ্টির এই রীতিকে অনেকেই বলেন ‘গ্রিনেস্ট ওয়ে’ | এর ফলে জ্বালানির নিধন হয় না | বিলুপ্তপ্রায় শকুনদের খাবারের যোগান হয় | একে একদিকে পার্সিরা সেবা হিসেবেও দেখেন | অর্থাৎ নশ্বর দেহ দিয়ে প্রাণীদের সেবা |

তবে বর্তমানে শকুনের সংখ্যা কমেছে | ফলে নৈঃশব্দ্যের মিনারে জমে থাকা মৃতদেহের সদ্ব্যবহার করার জন্য কেউ থাকে না | থেকেই যায় পরিবেশ দূষণের আশঙ্কা |

সব ধর্মীয় রীতির সঙ্গেই ভালমন্দ দিক জড়িয়ে থাকে | পার্সিদের মৃতদেহ সৎকার রীতিও এর ব্যতিক্রম নয় | কেউ বলেন‚ এভাবেই পক্ষীকুলের সেবা করতে করতে মৃতদেহের পঞ্চভূতে বিলীন হয়ে যাওয়া ভাল | আবার কেউ কেউ মনে করেন‚ এই রীতি সম্পূর্ণভাবে দূষণ-রহিত নয় | তবু ট্র্যাডিশন বয়ে চলে নিজের পথে |


Comments

Popular posts from this blog

হিমোফিলিয়া।

ডাঃ  আশীষ কুমার ঘোষ শিশু রক্তরোগ বিশেষজ্ঞ সহকারী অধ্যাপক শিশু অনকোলজি  বিভাগ জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইন্সটিটিউট ও হাসপাতাল ঢাকা। ভূমিকাঃ হিমোফিলিয়া ( ইংরেজি: Haemophilia, অথ...

Child Cancer Specialist of Dhaka.

  Dr. Ashis Kumar Ghosh Cancer/Oncology specialist Assistant Professor Department of Pediatric Hematology and Oncology National Institute of Cancer Research and Hospital Expertise:  Pediatric Hematology, Pediatric Oncology, Rare Childhood Cancer and Pediatric Medicine Tel- 01712685509   Video Consultation/Online Consultation by Whatsapp - 01712685509 (On prior appointment)     Chamber: 1         Health and Hope Hospital  (Sunday and Wednesday )                                      152/2/G Green Road. Pantho Path. Dhaka-1205                                 09611996699...

বাচ্চা মোটেই খেতে চায় না।  কী করবেন ?

বাচ্চা মোটেই খেতে চায় না।  কী করবেন? ডাঃ অাশীষ কুমার ঘোষ শিশু ও শিশু রক্তরোগ বিশেষজ্ঞ  সহকারী অধ্যাপক শিশু হেমাটলজি ও অনকোলজি বিভাগ জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইন্সটিটিউট ও হাসপাতাল সিনিয়র কনসালট্যান্ট (টেলি -মেডিসিন) Fan Jingle Medical Operation, Hong Kong. জন্মের শুরু থেকে ছ’মাস পর্যন্ত বাচ্চা কেবলমাত্র মায়ের বুকের দুধ খাবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নিদানও তাই। স্তন্যপানই শিশুর  পর্যন্ত। মায়ের দুধই যাবতীয় ভিটামিনস (কেবল ভিটামিন ডি আলাদা দিতে হবে), মিনারেলস ও প্রয়োজনীয় পুষ্টি জোগাবে। মায়ের দুধের বিকল্প ছ’মাস বয়স পর্যন্ত, সারা পৃথিবীতেই আর কিছু নেই। কিন্তু ছ’মাসের পরে শুধু বুকের দুধে বাচ্চার সামগ্রিক পুষ্টি মোটেই সম্ভব নয়। ছয় মাসের পরে মায়ের বুকে দুধ যথেষ্ট নয়, কেন? উঃ কারণ, হু-র বিভিন্ন পরীক্ষা ও রাসায়নিক বিশ্লেষণে ৫৫০ মিলি বুকের দুধে ক্যালরি (ঘাটতি ৬০%), আয়রন (ঘাটতি ৯৫%), প্রোটিন (ঘাটতি ৪৫%), জিঙ্ক ও ভিটামিন এ-র (ঘাটতি ৯০%) লক্ষণীয় ঘাটতি প্রমাণিত। বিশেষ করে ছয় থেকে আট মাস বয়সে আয়রন আর জিঙ্কের ঘাটতিই সবচেয়ে প্রকট। এই বয়সের একটি শিশুর আয়রন প্রয়োজন একজন প্রাপ্তবয়স্কের ত...